একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনটি ছিল ২০১৫ সালের ২৯ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টা। কারণ এ সময় আমার বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। এদিনে আমি যতটা না খুশি তার চেয়ে বেশি খুশি আমার পিতামাতা ও আমার বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আমার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। আর সে কারণেই তিনি চেয়েছিল আমাকেও সরকারি কর্মকর্তা বানাবেন। সুতরাং আজ আমার অনুভূতির সবটুকুর প্রাপ্য আমার বাবা।
আমি মূলত পঞ্চম শ্রেণী থেকেই বিসিএসের স্বপ্ন দেখি। কারণ আমার মামা ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট আর বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। তারা চাইতেন আমিও যেন তাদের মতো হই। এজন্য আমি ছোটবেলা থেকেই বেশি বেশি পাঠ্যবই অধ্যয়ন করতাম। যার কারণে আমার বেসিক খুব মজবুত ছিল। আর আমি বিসিএসের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেই অনার্স তৃতীয় বর্ষ থেকে।
প্রশ্ন : ৩৬(৪১) তম বিসিএস প্রিলিমিনারিদের জন্য আপনার বিশেষ কী কী পরামর্শ রয়েছে?
এ পরামর্শের ব্যাপারে আমি বলব, এখন থেকে আর সময় অপচয় না করে রুটিন মাফিক বিষয়ভিত্তিক নিয়মিত ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পড়াশোনা করা দরকার। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, আপনি নিজেকে সময় দিন। মাত্র কয়েক মাসের জন্য সামাজিক, পারিবারিকসহ অন্য কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কারণ কয়েক মাসের ওপর নির্ভর করছে আপনার জীবনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি কুধারণা প্রায়ই দেখা যায়, যে বিষয়ে কম পারে সে বিষয় কম পড়ে। এ ধরনের অভ্যাস বদলাতে হবে। কারণ এটি বিসিএস দেশের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। সব বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমে আসা যাক সাধারণ জ্ঞান, এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকার বিকল্প নেই।
বিসিএসে চান্স পাওয়ার জন্য একজন পরোক্ষ শিক্ষকের রয়েছে অপরিসীম ভূমিকা। আর এক্ষেত্রে আপনি অনার্স পড়াকালীন অষ্টম অথবা নবম-দশম শ্রেণীর কোনো শিক্ষার্থীকে টিউশনি করাতে পারেন অথবা কোনো কোচিং সেন্টারে সময় দিতে পারেন। আমি মনে করি, এ টিউশনি বিসিএসে আপনার কাঙ্ক্ষিত সফলতা বয়ে আনবে।
এক্ষেত্রে কিছু বই ও উপকরণ পরীক্ষা প্রস্তুতির শুরু থেকেই আপনার সঙ্গী হওয়া উচিত বা আপনার সংগ্রহে থাকা উচিত। এগুলোর মধ্যে যেমন- বাংলাদেশের সংবিধান, ম্যাপের ওপর কিছু বই, নিজের সংগ্রহে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মানচিত্র, অষ্টম থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পুরো এক সেট বই, অক্সফোর্ড অ্যাডভান্স লারনার ডিকশনারি, বাংলা একাডেমি ইংরেজি বাংলা অভিধান এবং যে কোনো একটি বাংলা টু বাংলা অভিধান। ভোকাভোলারিতে পর্যাপ্ত দক্ষতা রাখতে সাইফোর্স ইংরেজি ভোকাভোলারি আপনার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। এছাড়া প্রতি মাসে প্রকাশিত যে কোনো একটি চাকরির তথ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন আপনাকে রাখতে হবে। যেমন হতে পারে কারেন্ট আ্যফেয়ার্স অথবা কারেন্ট নিউজ। এর সঙ্গে আপনি বহুল তথ্য-সমৃদ্ধ একটি বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন দ্বিমিক রাখতে পারেন। কিন্তু ইংরেজি ফ্লাস কার্ড রাখতে অবশ্যই ভুলবেন না।
প্রিলিমিনারিতে সফলতা পেতে হলে আপনাকে সব বিষয়কেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে নতুন সিলেবাস অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। তারপরও আমি মনে করি, আপনাকে প্রথমে সাধারণ জ্ঞান, দ্বিতীয়ত বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, তৃতীয়ত ইংরেজি এরপর বাংলা, গণিত ও মানসিক দক্ষতা। সাধারণ জ্ঞানকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলব; কারণ এর কোনো সুনির্দিষ্ট সিলেবাস নেই, এর পরিসর ব্যাপক। আর বর্তমান যুগ তো তথ্যপ্রযুক্তি ও মিডিয়ার যুগ। এজন্য আপনাকে সার্বক্ষণিক এর সঙ্গে লেগে থাকতে হবে, আর জানতে হবে আপডেট খবর।
Submit a Comment