Shamim Anwar, এএসপি, বাংলাদেশ পুলিশ
৩৪ তম বিসিএস, মেধাক্রম ১১
………………………………………….
ক্যাডার আর ননক্যাডার হবার মাঝে মার্কসের ক্ষুদ্র যে পার্থক্য, তা সংঘটনকারী বিষয়সমূহের মধ্যে প্রধানতম হল এই গাণিতিক যুক্তি-মানসিক দক্ষতা এবং বিজ্ঞান,প্রযুক্তি ও কম্পিউটার। বিগত বিসিএসসমূহে যারা বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছেন এবং পাননি তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রাপ্ত মার্কসের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখুন ( পিএসসি নির্দিষ্ট সময়ান্তে নিয়োগ হয়ে যাওয়া বিসিএসের নম্বরপত্র প্রকাশ করে থাকে) আশা করি আপনি গণিত ও বিজ্ঞানে আপনার করনীয় সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারনা পেয়ে যাবেন।
(আজ বিষয় দুটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটি ওভার ভিউ দিচ্ছি, বিস্তারিত পাঠ পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হব শীঘ্রই।)
#গাণিতিক_যুক্তিঃ
যে চ্যাপ্টার গুলোতে আপনার সমস্যা বেশি, সেগুলো নিয়ে অনর্থক মাথা কুটে না মরে আপনার ভাল দখল আছে বা পড়লেই পারবেন, এমন চ্যাপ্টারগুলোর ওপরই বেশি জোর দিন। মনে রাখবেন, পরীক্ষার প্রশ্নে অপশন থাকবে, তাই দু চারটা দুর্বোধ্য চ্যাপ্টার এড়িয়ে যেতেই পারেন। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তুতি পর্যায়ে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিকল্প নেই। চোখ বুলিয়ে যাওয়া বা কাগজেকলমে করা– যেটাই করেন প্রতিদিনই অংকের জন্য যেন বড় একটা সময় বরাদ্দ থাকে, সেটি নিশ্চিত করুন। সবচে ভাল হয় সকালে করলে ( আমি নিজে করতাম), অংক মুখস্থ করার বদভ্যাস পরিত্যাগ করুন, যতটুকুই করবেন- বুঝেবুঝে করবেন। সত্যি যদি আপনি ক্যাডার প্রত্যাশী হয়ে থাকেন, তাহলে আশা করি অংকে সন্তোষজনক একটা প্রস্তুতি নিশ্চিত করেই পরীক্ষা দিতে যাবেন।
#মানসিক_দক্ষতা :
বিগত বছরের প্রশ্নসমুহ যদি মনযোগ দিয়ে দেখে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, এ অংশে তেমন কঠিন প্রশ্ন প্রায়শ আসে না। তবে প্রশ্নকর্তা আপনাকে বিভ্রান্ত করার সবরকম আয়োজনই যে রাখবেন,সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন। একটু অসতর্ক হলেই হাত ফসকে যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ একটি নম্বর। তাই যদি মাথা ঠাণ্ডা, চোখকান খোলা রেখে সতর্কতার সাথে উত্তর করেন ভাল একটি নম্বর আশা করতেই পারেন। ওরাকলের মানসিক দক্ষতা বইটা অন্যান্যগুলোর তুলনায় ভাল মনে হয় আমার কাছে। এশিওরেন্স ডাইজেস্টেও চমৎকার প্র্যাকটিস আইটেম আছে। প্রস্তুতিটা আরেকটু শাণিত করতে সময় পেলে পড়ে নিতে পারেন।
#FAQ_গণিত
#পরীক্ষার_হলে_অংক_না_মিললেঃ
পরীক্ষার হলে কোন অংক না মিললে বা না পারলে ঘাবড়ে না গিয়ে তৎক্ষণাৎ অন্য অংক করা শুরু করে দিন। এটা নিয়ে বেশি টেনশন বা চিন্তা করা শুরু করলে অন্য পারা অংকও ভুলে যাবার চান্স আছে।
#অংক_না_বুঝলেঃ
কোন ম্যাথ কঠিন লাগলে বা ভালভাবে না বুঝলে অন্ধভাবে সেটি মুখস্থ না করে গণিতে এক্সপার্ট কোন বন্ধুর সহায়তা নিন। মানসম্মান ধূলোয় গড়াগড়ি খাবে– বিপদের দিনে এমন আলগা ভাব ধরে থাকবেন না। একমাত্র গনিত ও মানসিক দক্ষতাতেই আপনি পুরো নম্বর তোলার সুযোগ পাবেন। তাই এটিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে কোন ভুল নয়।
#জ্যামিতিঃ
জ্যামিতির কিছু প্রশ্ন দেখবেন ঘুরে ঘুরে বারবার আসে। এমন ৪/৫ টা প্রশ্ন ঝারা মুখস্থ করে ফেলতেও পারেন। সম্পাদ্যগুলো সহজ, তাই এগুলো ভালভাবে দেখে নিন।
#অন্যান্যঃ
বিগত বছরে বিভিন্ন বিসিএসে আসা প্রশ্নগুলো সলভ করতে ভুলবেন না। সূত্রগুলো মুখস্থ আছে কিনা, ঝালিয়ে নিন। অংক দেখার বা কাগজেকলমে করার সময় আগেই উত্তর দেখবেন না। প্রথমে নিজে চিন্তা করবেন, এর সমাধান কেমন হতে পারে। না পারলে তারপর সমাধান দেখা।
#বিজ্ঞান_প্রযুক্তি_ও_কম্পিউটার
২৭তম থেকে ৩৭তম পর্যন্ত ( কমপক্ষে ৩৬ ও ৩৭তম) বিসিএস এর প্রশ্নসমূহ প্রথমে ভালমতো পড়ে নিন। এরপর ভাল কোন গাইড বই থেকে ( আমার কাছে বিজ্ঞান- কম্পিউটার মানেই ওরাকল) সরাসরি সিলেবাসে উল্লেখ আছে এমন আইটেমগুলোতে বারবার সতর্ক চোখ বোলাতে থাকুন। ( বিস্তারিত আসছে)
#FAQ_বিজ্ঞান_ও_অন্যান্যঃ
#চিত্র_প্রযোজ্যতা_অপ্রযোজ্যতা
ননসায়েন্স স্টুডেন্ট দের জন্য এই সামান্য সময়ে চিত্র আকার দক্ষতা অর্জন রীতিমতো অসম্ভব। তাই আমার পরামর্শ থাকবে, আপনার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে, এমন ৮/১০ টা প্রশ্ন বাদে বাকিগুলোর ক্ষেত্রে চিত্র এভয়েড করুন। চিত্র না থাকলে অর্ধেক নম্বর কেটে ফেলা বিষয়ক গুজবে কান দিবেন না। বরং অপ্রয়োজনীয় চিত্র বা ভুলভাল চিত্রে মার্কস কাটা যেতে পারে।
#পরীক্ষার_হলে_প্রশ্ন_হাতে_পাবার_পরঃ
প্রথম পাচ মিনিট প্রশ্নপত্রে প্রদত্ত অপশন গুলো থেকে যেগুলো আপনি ভাল উত্তর করতে পারবেন সেগুলো বাছাই করে টিক দিয়ে রাখুন, উত্তর শুরু করার পর যেন বারবার প্রশ্ন সিলেকশন করতে যেয়ে মনযোগ সরে না যায়। পুরো প্রশ্নপত্র থেকে যে দুইটা,প্রশ্ন ( কমপক্ষে একটা) আপনি খুব ভাল লিখতে পারবেন, চিত্র সংকেত প্রভৃতি দিতে পারবেন সে দুটো প্রথমে লিখুন। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারন বেশিরভাগ সময় দেখা যায় প্রথম দিকের একদুইটা উত্তরইই পরীক্ষক ভালমতো পড়েন, ( খুব সহজে অনুমান করুন, খাতা মূল্যায়ন কারী সচিব বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর সিনিয়র প্রফেসর রা অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে শতশত খাতা লাইন বাই লাইন দেখবেন না। তাই পরের উউত্তর গুলোর মার্কস ওই প্রথম দুই তিনটার ওপরই ডিপেন্ড করে। আরেকটা কথা প্রশ্ন সিলেকশন এর সময় পূর্ণ নম্বর বিশিষ্ট প্রশ্নের ( যেমন একটামাত্র প্রশ্ন যার মান ১০) চেয়ে ভাগাভাগ করে দেওয়া নম্বর বিশিষ্ট প্রশ্নের ( যেমন ১০ নম্বরের জন্য চারটা প্রশ্ন যার মান ২+১+৫+২) উত্তর করার চেষ্টা করুন, বেশি মার্কস আসার সম্ভাবনা থাকবে।
#খাতা_ভরে_এলেই_নাকি_নাম্বার?
এটা বাংলা সাহিত্য নয় যে, যা মন চায় লিখে খাতাভরিয়ে পরীক্ষককে বোকা বানিয়ে রাশিরাশি নম্বর বগলদাবা করে নিয়ে আসবেন। বিজ্ঞানের খাতা মূল্যায়নকারী পরীক্ষক এর মেন্টাল সেট আপ ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে। বিজ্ঞানের শিক্ষক সংক্্ষিপ্ত অথচ সুস্পষ্ট টু দ্য পয়েন্ট উত্তর চান। বিবেচনায় রাখুন
#উপস্থাপনাঃ
পার্থক্য আসবেই। সেগুলোর উত্তর বর্ননামূলক স্টাইলে লিখবেন না। পেন্সিল দিয়ে ছক তৈরি করে সেই ছকে ১…২..৩ এই ভাবে সুস্পষ্ট ভাবে পার্থক্য গুলো তুলে ধরবেন।
নিজের খাতাটা যেন অন্য পরীক্ষার্থী দের খাতার চেয়ে ডিফারেন্ট দেখায়, উত্তর করার সময় এই কথাটা শুধু মাথায় রাখুন।
#সময়ের_দিকে_লক্ষ_রাখুনঃ
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, এ বিষয়ে সময়ের দিকে লক্ষ রাখা অন্য যে কোন বিষয়ের চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের তুলনায় প্রশ্নসংখ্যা ( বিজ্ঞান প্রশ্নের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের সাথে অবধারিত ভাবে নানারকম লেজ যুক্ত থাকা। সীমিত সময়ে এমন লেজযুক্ত এতগুলো প্রশ্নের উত্তর করতে সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা লেজেগোবরে না করে ফেলেন, সাবধান থাকুন।
#প্রথমে_উত্তর_বিজ্ঞান_নাকি_প্রযুক্তি
আমি নিজে সবসময় প্রযুক্তি /কম্পিউটার অংশ আগে উত্তর করি। তুলনামূলক কম প্রশ্নে অধিক নম্বর বরাদ্দ থাকে। লেজটেজ কম, এই যুক্তিতে। তবে এটা আপনার নিজের ইচ্ছার ব্যাপার।
#আমি_তো_বিজ্ঞানের_ছাত্র_বিসিএস_বিজ্ঞান_কি_পড়ার_দরকার_আছে?
মক্কার মানুষ যে যে কারনে হজ পায় না ( আসলেই কি এমন!) একই কারনে বিজ্ঞানের ছাত্ররা সামান্য অবহেলায়, নিজেকে এগিয়ে দেওয়ার উপযোগী সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ট্রাম্পকার্ডটিই অপচয় করে বসে থাকেন।কি বুঝাতে চেয়েছি, ভেঙ্গে আর বললাম না। আক্কেলমন্দ কেলিয়ে ইশারায়ে কাফি
#মুখস্থ_হয়_না_ভাইয়া_মনযোগ_দিতে_পারছি_নাঃ
মুখস্থ করা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাবেন না। এই টেনশনের মুহূর্তে মাথাটা একটু বেশিই বিট্রে করে। সবকিছুই শুধু ভুলে যেতে চায়। মাথার ওপর জোর খাটিয়ে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনাটাই বেশি থাকে। তাই এ মুহূর্তে মাথাটা ফাকা করে দিয়ে শুধু চোখ বুলাতে থাকুন। দেখবেন, এতদিন যেসব আইটেম কিছুতেই মাথায় ঢুকতে চাইত না, আস্তে আস্তে সেগুলো সম্পর্কে একটা ধারনা এসে যাচ্ছে। আপনি যে ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টই হোন, দরকার এই এক মাসের নিবিড় প্রস্তুতি। অনেক পড়তে হবে ভেবে নিজেকে চাপে ফেলার দরকার নেই। সবসময় ভাববেন, ‘আমার সাধ্যে যতটুকু কুলায়, আমি পড়ব, ক্যাডার হবার জন্য আমি মরে যেতে পারব না।’ দেখবেন পড়া খুব ভাল হচ্ছে।