১. বিসিএস পররাষ্ট্র
নোট: পররাষ্ট্র চয়েস দিলে প্রথমেই দিবেন। না দিলে তালিকা থেকেই বাদ দিন। নিচে দিলে ক্ষতি নেই। তবে সেটা অযথা দেওয়া হবে।
গ্রুপ-বি
২. বিসিএস প্রশাসন/পুলিশ/কাস্টমস।
৩. বিসিএস কাস্টমস/প্রশাসন/পুলিশ।
৪. বিসিএস পুলিশ/কাস্টমস/প্রশাসন।
নোট: এখানে যার যেটা বেশি পছন্দ সেটা সে আগে দিবেন, এতে কোনো সমস্যা নাই।
গ্রুপ- সি
৫. বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব/ইকনমিক/কর।
৬. বিসিএস ইকনমিক/ কর/নিরীক্ষা ও হিসাব।
৭. বিসিএস কর/নিরীক্ষা ও হিসাব/ইকনমিক।
নোট: এই তিনটির মধ্যে যেটি বেশি পছন্দ সেটি আগে দিন। এভাবে পরেরগুলো দিন; কোনো অসুবিধা হবে না।
গ্রুপ-ডি
৮. বিসিএস সড়ক ও জনপদ/গণপূর্ত/স্বাস্থ্য/রেলওয়ে প্রকৌশল।
নোট: এখানে শুধু অপেক্ষাকৃত ভালো প্রফেশনাল/টেকনিকাল যাদের তারাই দিবেন। এর কারণ যে ক্যাডারগুলো আমি এর নিচে রেখেছি তার থেকে আপনাদের উল্লিখিত নিজেদের ক্যাডারগুলোই ভালো হবে।
আর হ্যাঁ, এগুলোর মধ্য থেকে যদি কেউ শুধুই প্রফেশনাল ক্যাডারেই থাকতে চান তবে তিনি নির্দ্বিধায় এখান থেকে শুধু একটি চয়েসই রাখবেন।
গ্রুপ-ই
৯. বিসিএস আনসার।
১০. বিসিএস তথ্য (ক) ও (গ)।
১১. বিসিএস খাদ্য
১২. বিসিএস তথ্য (খ)
১৩. বিসিএস রেলওয়ে পরিবহন।
১৪. বিসিএস সমবায়।
১৫. বিসিএস ডাক।
১৬. বিসিএস শিক্ষা/কৃষি/সমমান।
নোট: এই গ্রুপের সব ক্যাডারই প্রায় একই। সামান্য একটু যা কম-বেশি হয় তার জন্য আমি ৮-১৪ পর্যন্ত যেভাবে দিয়েছি সেভাবেই রাখবেন।
এবার কিছুটা ব্যাখ্যায় আসি
গ্রুপ-এ
বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের প্রমোশন গ্রোথ সবচেয়ে ভালো (শ্রেণিকক্ষে বেশ কিছু বাস্তব উদাহরণ দিয়ে থাকি)। দেশের বাইরে নানা দেশ ভ্রমণ করা, লাল পাসপোর্ট ব্যাবহার করা থেকে শুরু করে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা থাকলেও এই ক্যাডার প্রথম পছন্দ অনেকেই দেয় না। কেউ কঠিন ভাইভা বোর্ড ফেস করার ভয়ে, আর কেউ বিদেশে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বেশি সময় যাতে না কাটাতে হয় এ কারণেই এই ক্যাডার তালিকাতেই অনেকে রাখেন না।
সমাধান:
বিসিএস পররাষ্ট্র প্রথম চয়েস দিলে ভাইভা খুব কঠিন হবে বা পুরো ভাইভা ইংরেজিতেই হবে এই ধারণা অনেকাংশে সঠিক নয়।
আবার পররাষ্ট্র ক্যাডার প্রথম চয়েস দিলে পররাষ্ট্র না হলে নিচের অন্য ক্যাডার আর হবে না, এই ধারণাও একদমই ভুল।
আমার নিজের তিনটি বিসিএস ভাইভাতে পররাষ্ট্র প্রথম চয়েস নিয়ে লড়াই করার অভিজ্ঞতা আছে। আমার বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে না হয়ে বর্তমানে আমি মন্ত্রণালয়ে তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছি।
আব্দুল কাদের নামে আমার এক বন্ধু ২৮তম বিসিএস এ পররাষ্ট্র প্রথম চয়েস দিয়ে বিসিএস খাদ্য ক্যাডারে চাকরি করেছে। সুতরাং এই ভয় দূরে সরিয়ে রাখাই ভালো হবে।
পররাষ্ট্র প্রথম চয়েস দিলে
১. ভাইভাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের নানাদিক নিয়ে বেশ কিছুটা দক্ষতা দেখাতে হতে পারে।
২. একাডেমিক রেজাল্টগুলো ভালো থাকলে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
৩. ইংরেজি কথোপকথনে দক্ষ হলে কাজে লাগতে পারে। কারণ কিছু কিছু ভাইভা বোর্ডে আপনার ইংরেজি জ্ঞান যাচাই করে দেখতেই পারে।
৪. বৈশিক দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্ব বা সম্পর্কগুলোতে বাস্তব জ্ঞান থাকলে ভালো হবে।
এগুলোতে যদি কেউ ভালো করতে পারে, তবে আমি বলব বিসিএস পররাষ্ট্র চয়েস নাম্বার এক (১) এ দিলে ভয়ের কিছুই নেই।
এরপরেও যদি ভয় লাগে তাহলে এটা চয়েস থেকে একেবারেই ফেলে দিন। মনে রাখবেন উপরে আমার দেওয়া চয়েস লিস্ট থেকে প্রথম চারটি চয়েস ১-৪ এর মধ্যেই রাখবেন। এর বাইরে অন্য কোথাও এদের ফেলবেন না।
গ্রুপ-বি
যদি কেউ মনে করে পুলিশি চাকরি বেশি ভালো লাগে, সে পুলিশই সবার উপরে আর প্রশাসন তার নিচেই দিবেন। একইভাবে কেউ প্রশাসন উপরে দিলে পুলিশ তার নিচেই দিবেন কোনো সমস্যা নাই। এদিকে বিসিএস কাস্টমস ক্যাডারটি বাস্তবিক অর্থেই অনেক স্ট্যান্ডার্ড একটা ক্যাডার। কাসটমস ক্যাডারের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি হওয়ায় অনেকেই প্রথম চয়েস কাস্টমস দিয়ে থাকে। পাশাপাশি প্রমোশন গ্রোথ ভালো, সরকারি অনেক অ্যাওয়ার্ড সুবিধা রয়েছে কাস্টমসে। এ কারণে পুলিশ বা অ্যাডমিনের উপরে কাস্টমস কেউ রাখলে এতে অবাক হবার কিছুই নেই। এক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত ২-৪ এর যেকোনো একটা প্যাটার্ন আপনি নিতে পারেন, কোনো ভুলই হবে না।
যদিও আমার তালিকায় আমি বিসিএস প্রশাসন উপরে রেখেছি কিন্তু চোখ চলে যাচ্ছে কাস্টমস আর পুলিশের দিকেই। বাকিটা আপনার ব্যক্তিগত ভাবনার বিষয়।
প্রশ্ন হচ্ছে প্রশাসন কেন পুলিশ কাসটমসের উপরে রাখলাম? কয়েকটি কারণে পুলিশ/কাস্টমস থেকে প্রশাসন আমার নিকট কিছুটা উপরে—
১. প্রশাসনে পদসংখ্যা ২০০টি আর পুলিশে পদসংখ্যা ৭২টি।
২. পুলিশের এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ট্রেইনিং এ অনেকেই জীবনের অর্ধেক আয়ুষ্কাল খুইয়ে আসে। অনেকেই খোলামাঠেই কান্নাকাটি করে পুলিশ ক্যাডার পরিবর্তন করার জন্য।
৩. অন্যদিকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিচের দিকে বেশ কিছু ভালো পদ লাভ করা যায়। যেমন— এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, এডিএম, ডিসি পদগুলো বেশ দায়িত্বশীল ও সম্মানজনক।
৪. পুলিশের ক্ষেত্রে এসপি হওয়ার আগে প্রচুর কষ্ট করতে হবে। প্রতি পদে পদে চ্যালেঞ্জ থাকবে। তবে এসপি হওয়ার পর থেকে পুলিশ ক্যাডারকে আমি প্রশাসন থেকে একটু সামনে এগিয়ে রাখতে চাই। এসপি লেভেলের উপর থেকে পরবর্তী পদায়নগুলো অনেকটাই স্বপ্নের মতো লাগবে।
৫. অন্যদিকে বিসিএস কাস্টমস ক্যাডারের প্রমোশন গ্রোথ ভালো, সমাজের উঁচু তলার বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারি কাজে বন্ধুত্বলাভ ঘটলেও এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদটি আসে প্রশাসন ক্যাডার থেকে। সেদিক থেকে শুধু এনবিআরের মেম্বার পদটাই এই ক্যাডারের সবচেয়ে বড় পদ।
তাহলে বন্ধুরা এখন সিদ্ধান্ত নিন পুলিশ, প্রশাসন নাকি কাস্টমস আগে দিবেন। যেটাই দিন ক্ষতির কিছু নাই।
গ্রুপ-সি
দেখুন এই গ্রুপে আমি অবলিগ দিয়ে তিনটি ক্যাডারকে তিনবার করে সাজিয়েছি। বিসিএস অডিট ও বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডার দুটির বিশেষ গুণগুলো হচ্ছে—
১. পোস্টিং ঢাকায় হয়।
২. প্রমোশন লেভেল ভালো।
৩. ফরেইন ট্যুর প্রচুর হয়ে থাকে।
৪. ৯-৫ অফিস সময়। শুক্রবার-শনিবার কাজ নাই।
৫. বাংলাদেশ সচিবালয়ে শুরু থেকেই পোস্টিং হতে পারে।
অন্যদিকে, বিসিএস ক্যাডারটি বর্তমান কর বা মুসকের যুগে বেশ ভালো একটি ক্যাডার বলে আমার মনে হয়েছে। এই ক্যাডারে জবের পাশাপাশি খুব অল্প বয়সেই সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষগুলোর সঙ্গে পরিচয়ের দারুণ সুযোগ ঘটে। জেলা শহরে পোস্টিং হলেও কাজের ধরণ অনুযায়ী জেলাতেও ভালোই থাকা যাবে। ঢাকাতেও পোস্টিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
পরামর্শ
আমার মতে গ্রুপ- সি থেকে উল্লিখিত তিনটি থেকে যেকোনো ক্যাডার উপরে-নিচে করে আপনার নিজের ভালোলাগা অনুযায়ী সাজাতে পারেন।
গ্রুপ -ডি
লক্ষ্য করুণ এখানে আমি টেকনিকাল ক্যাডারগুলো থেকে বিসিএস স্বাস্থ্য/সড়ক ও জনপদ/গণপূর্ত ক্যাডারগুলো অবলিগ করে দিয়েছি। অর্থাৎ কেউ যদি এই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী হয়েও জেনারেল ক্যাডার ও তার নিজের ক্যাডারটা থেকে যেকোনো টাই হলে সেটিসফাইড মনে করে তাহলে এই সাত নম্বর সিরিয়ালেই তার নিজের টেকনিকাল চয়েসটা দিবেন।
তবে, কেউ যদি মনে করে সে শুধু প্রফেশনাল/টেকনিকাল ক্যাডারই হতে চায় তাহলে সে শুধুই প্রফেশনাল ক্যাডারের একটাই চয়েস দিবে। এতে কোনো সমস্যা নাই।
আবার কেউ যদি মনে করে প্রফেশনালটা হলে ভালো; আর তা না হলে অন্য যেকোনো একটা ক্যাডার হলেও হবে অর্থাৎ চাকরি একটা লাগবেই, তারক্ষেত্রে আমার উপরে উল্লেখিত চয়েসগুলো থেকে সিরিয়ালি সবগুলোই পূরণ করতে হবে।
গ্রুপ-ই
যদি ক্ষমতার কথা বলি তবে এই গ্রুপে সবচেয়ে ভালো ক্যাডার হচ্ছে বিসিএস আনসার। যেখানেই পোস্টিং হোক নিজেকে রাজা রাজা মনে হবে। অনেক আনসার সদস্য আপনার কমান্ডিং এ থাকবে, তাদের বেতনবিল বা টিএ/ডিএ আপনার স্বাক্ষরে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিন্তে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে একটা রাজা রাজা ভাব নিয়ে চাকরিজীবন কাটাতে পারবেন। আরও কিছু আয়েশি সুবিধা আছে যা বলতে চাই না; জব হলে নিজেই বুঝবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত ভালো একটা ক্যাডারই যদি হবে তাহলে একে এত নিচে কেন দিলাম?
এর অনেক কারণ আছে—
প্রথমত, এই জবে পুলিশের থেকে বেশি কঠিন ট্রেনিং করতে হতে পারে; দ্বিতীয়ত, পোস্টিং হবে সামরিক অফিসারের নিয়ন্ত্রণে। এর ফলে বেশ খানিকটা শৃঙ্খলিত জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত হতে হবে। তৃতীয়ত, প্রমোশন লেভেল খুব সুবিধার হয় না। এগুলো মেনে নিতে পারলে এই ক্যাডার খারাপ না।
এই গ্রুপের অন্য ক্যাডারগুলোর মধ্যে খাদ্য তারপর বিসিএস তথ্য ক্যাডার পদ যেভাবে সাজিয়ে দিয়েছি সেভাবেই সাজাবেন। তবে তথ্য জেনারেল ক্যাডারটি বেশ ভালো একটি ক্যাডার। এখান থেকে জেলা তথ্য অফিসার ও মন্ত্রণালয়ে মাননীয় মন্ত্রীদের পাবলিক রিলেশন অফিসার (পিআরও) হওয়া যায়। পিআরওরা সরাসরি মন্ত্রীদের সঙ্গেই কাজ করেন। মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে থাকেন। তবে এই বিজ্ঞপ্তিতে বিসিএস তথ্য জেনারেল ক্যাডারে মাত্র দুইটি পদ থাকায় আমি এটিকে নিচে দিয়েছি। এভাবে উপরে উল্লেখিত সিরিয়াল বজায় রেখে বিসিএস রেলওয়ে, ডাক, সমবায় ক্যাডারগুলো চয়েজে রাখবেন।
শেষ কিছু কথা
আমি আমার নিজের চিন্তাভাবনা থেকে যতটুকু বুঝি তাই দিয়ে প্রত্যেকের জন্যই একটা কমন ক্যাডার চয়েস সাজানোর চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস এতে নতুন ক্যাডার প্রত্যাশীরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। তবে একথাটি মনে রাখতে হবে এই চয়েসক্রম কোনো বাইবেল না। কারও কাছে অন্যকিছু ভালো মনে হলে সে যেন সেভাবেই দেয়। কেউ পুলিশ বা আনসার না দিতে চাইলে প্রদত্ত সিরিয়াল থেকে ওইদুটি সরিয়ে দিলেই হবে। এভাবে অন্যকোনো পদ ভালো না লাগলে সেটিকে সরিয়ে রেখে আমার দেওয়া সিরিয়াল ঠিক রাখতে হবে।
তবে অনেককেই দেখেছি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার পরিবর্তন করে পরের বিসিএস এ বিসিএস পুলিশ বা প্রশাসন বা জেনারেলের অন্য ক্যাডার নিয়ে চলে যায়। আবার, এরকম মানুষও আমি পেয়েছি যিনি একবছর বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর আবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে চলে এসেছে।
জীবন দৃষ্টিভঙ্গি মানুষভেদে ভিন্নভিন্ন হতেই পারে। জীবন ক্ষণকালের। ভালো থাকাটাই সবার আগে। অনেকের পরামর্শ শুনে এমন ক্যাডার পছন্দ করলেন যে ক্যাডার ছয় মাসেও ছুটি পায় না। অথচ আপনি মোটেও টানা কাজে থাকতে পারেন না। তখন তথাকথিত সেই ভালো ক্যাডার পাওয়া হবে আপনার জন্য বিষ। যাই হোক, যে জীবন যেভাবে যাকে মানায় তার সে জীবনই হোক, এই দোয়া করি।
লেখক : এমআই প্রধান (মুকুল), তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।