যারা অতীতের কোন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি অথবা যারা প্রথমবার অংশগ্রহণ করছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই প্রিলিমিনারি পরীক্ষাকে অনেক বেশি ভাগ্য-নির্ভর মনে করেন। মূলত তাদের জন্যই আমার ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারির অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করতে চাই। তাছাড়া পরিচিত অনেকেই জানতে চেয়েছেন। সত্যি বলতে, আমি এখনো পরামর্শ দেওয়ার মতো পর্যায়ের কেউ নই। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতাটুকুই শেয়ার করছি। সঙ্গে ফলাফলগুলোও শেয়ার করলাম, যদি কেউ উৎসাহিত হতে পারেন, সেজন্য। লেখাটাতে ভাষাগত বা মনোভাবগত ভুল থাকতে পারে, সেজন্য অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ভাই/আপুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সম্পূর্ণ লিখতে চাচ্ছি, তাই সংক্ষেপে চাইলেও একটু দীর্ঘ হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। যাহোক, শুরু করা যাক।
গ্রুপ স্টাডি প্রসঙ্গ: একা পড়তে আমার কখনো বিরক্তি হয় না, বরং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই প্রয়োজন হয়নি। তবে দুই-একদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটা বেশ কার্যকরী।
পরিবেশ প্রসঙ্গ: বাড়ি, খুলনা, ঢাকা- যেকোন এক জায়গায় থাকি। বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে বাড়িতেই থেকেছি। মন খারাপ হলে মায়ের সান্নিধ্যই সবচেয়ে ভাল ওষুধ বলে আমার মনে হয়েছে। প্রস্তুতির সময় মন ভাল থাকাটা অবশ্যই দরকার।
বই প্রসঙ্গ: নিচের বইগুলো কিনেছিলাম। কিছু বই কিনে খুব একটা কাজে আসেনি। তবে বেশি বেশি বই কেনাটাকে ভাল কাজ বলেই অনুভব করেছি।
(২) প্রফেসরস জব সলুশন
(৩)বাংলা ব্যাকরণ (৯ম-১০ম শ্রেণি)
(৪) A Handbook of English Literature (Sharif Hossain Ahmad Chowdhury)
(৫) MP3 (George) সিরিজ থেকে- [ fb/BDCareerGuide ]
-বাংলা
-বাংলাদেশ
-আন্তর্জাতিক
-বিজ্ঞান ও ভূগোল
(৬) Easy কম্পিউটার
(৭) কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স (মাসিক ও বিশেষ সংখ্যা)
(৮) মডেল টেস্ট এর গাইড
★পড়ার মতো আরো অনেক বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন ইত্যাদি রয়েছে যা তেমন একটা পড়া হত না এবং অভিজ্ঞ কিছু ব্যক্তির সাজেশনে হতাশ ও হীনমন্য হয়ে পড়তাম।
★নিজের আগ্রহে কিছু উপন্যাস, গল্প, কবিতা আগে থেকেই পড়া ছিল। তবে টেক্সট ও রেফারেন্স বই খুব কমই পড়েছি। প্রিলিমিনারিতে ২০০ পেয়েও (যদি কেউ কখনো পেয়েও থাকেন) এগুলো পড়ার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।
স্টাডি প্রসঙ্গ ও ফলাফল: আজ একবার ৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্নটাতে চোখ বুলালাম।সিলেবাসের কোন অংশের জন্য কী পড়েছিলাম ও ফলাফল কেমন এসেছিল তা সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।উল্লেখ্য, নিচের পড়াশোনা শেষ করার পর জব সলুশন ও মডেল টেস্ট শেষ করেছিলাম এবং যতদূর সম্ভব সবকিছু সিলেবাসভিত্তিক পড়েছিলাম।
(১) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য (৩৫): সাহিত্যের জন্য mp3 বাংলা ও প্রফেসরস ডাইজেস্ট পড়েছিলাম এবং ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ও mp3 বাংলা এর অধ্যায়ের প্রশ্নগুলো পড়েছিলাম। এই অংশের ৩৫ টা থেকে সবগুলো উত্তর করে ৩২ টার উত্তর সঠিক ছিল।
(২) ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য (৩৫): ভাষা অংশের জন্য শুধুই ডাইজেস্ট পড়েছিলাম, ২-৩ হাজার শব্দার্থ ও বানান মুখস্থ করেছিলাম, সাহিত্যের জন্য A Handbook of English Literature বইটা পড়েছিলাম। এই অংশের ৩৫টার মধ্যে ৩৪টার উত্তর করেছিলাম যার মধ্যে ৩২ টার উত্তর সঠিক ছিল। [ fb/BDCareerGuide ]
(৩) গণিত ও মানসিক দক্ষতা (১৫+১৫=৩০): এই অংশের জন্য শুধু প্রফেসরস ডাইজেস্ট পড়েছিলাম। একটু অবহেলা ছিল। প্রকৌশলের শিক্ষার্থী হয়েও গণিতে ১৫ টা থেকে ১২ টা উত্তর করে মাত্র ৯ টা সঠিক ছিল। মানসিক দক্ষতা অংশে ১৫ টা উত্তর করে ১৩ টার উত্তর সঠিক ছিল।
★ ২ ও ৩ নং পয়েন্টের সিলেবাসগুলো যাদের কাছে সহজ, আমার মনে হয়েছে প্রিলিমিনারি পাস করা তাদের জন্য কঠিন কিছু না।
(৪) সাধারণ বিজ্ঞান ও কম্পিউটার(১৫+১৫=৩০): বিজ্ঞানের জন্য প্রফেসরস ডাইজেস্ট ও mp3 বিজ্ঞান পড়েছিলাম। এই সিলেবাসটার অনেকখানিক জুড়েই সাধারণ জ্ঞান, যা মুখস্থ-নির্ভর। কম্পিউটারের জন্য প্রফেসরস ডাইজেস্ট ও ইজি কম্পিউটার পড়েছিলাম। বিজ্ঞানে ১৫ টা থেকে ১০ টার উত্তর দিয়ে সবগুলোই সঠিক ছিল। কম্পিউটারের ১৫ টা উত্তর দিয়ে ১৩ টা সঠিক ছিল।
(৫) বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক ও ভূগোল(৩০+২০+১০=৬০): এই অংশের জন্য আমি শুধু mp3 (George) সিরিজ পড়েছিলাম। সাম্প্রতিকের জন্য অনলাইনে ঘুরতাম একটু। বাংলাদেশ অংশে ২৯ টার উত্তর করে ২৭/২৮ টা সঠিক ছিল, আন্তর্জাতিকে ১৫ টার উত্তর করে ১৪ টা সঠিক ছিল, ভূগোল অংশে ৮ টা উত্তর করে ৭টার উত্তর সঠিক ছিল।
(৬) নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন (১০): এই অংশের জন্য বিশেষ কিছুই পড়িনি। কমন সেন্স ও সাধারণ জ্ঞান থেকে ৬ টা প্রশ্নের উত্তর করেছিলাম। প্রফেসরস জব সলুশনের আপডেট অনুযায়ী সবগুলোর উত্তর সঠিক ছিল।
শেষকথা: বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্নের ধরণে প্রতিবারই কিছু না কিছু পরিবর্তন আসে, যদিও সিলেবাস একই। ৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ১৭৯ টা প্রশ্নের উত্তর করেছিলাম যার মধ্যে ১৬৫ টার কাছাকাছি সঠিক ছিল। বাংলা মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, কিছু প্রশ্নের প্রিন্টিং মিসটেক থাকার কারণে উত্তর করিনি। আশা করছি, আমার এই সামান্য অভিজ্ঞতাটুকু কারো না কারো উপকারে আসবে, একটু হলেও। প্রিলিমিনারির ভাগ্য-নির্ভরতা পুরোপুরি অস্বীকার করার উপায় নেই। আমি নিজেই ৪০ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পাস করব কিনা নিশ্চিত নই।তবে সঠিক ও সৎ পরিশ্রম অবশ্যই একদিন ভাল ফল নিয়ে আসবে। আমার কাছে মনে হয়েছে প্রিলিমিনারির জন্য কোন বইটা পড়লাম/না পড়লাম সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার চেয়ে স্ট্র্যাটেজি ও টাইমিং নিয়ে ভাবনার গুরুত্বটাই বেশি। প্রিলিমিনারি হচ্ছে রিটেন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতামাত্র, এখানে ১৬০ পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, প্রশ্ন যতটাই সহজ হোক না কেন, ১২০ এর অধিক নম্বর কখনোই দরকার হয়নি। এই নম্বর পরবর্তীতেও কখনো কাজে আসবে না। পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছুই লিখতে পারলাম না। সবার প্রতি শুভকামনা থাকল, নিজের জন্যও চেয়ে নিচ্ছি।
৩৮ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফল-প্রত্যাশী; ৪০ তম বিসিএসে আপনাদের সহযাত্রী।