অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একটা ভালো সরকারি চাকরি পাচ্ছেন না কেন??

লেখকঃ ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার,, সাবেক সিনিয়র অফিসার(পূবালী ব্যাংক)

*ফেইসবুকে, মোবাইলে, বিভিন্ন ব্লগে এমনকি রাস্তাঘাটে দেখা হলে অনেকেই বলতে দেখেছি, “স্যার, আমার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার খুব ইচ্ছে। স্যার, আমার একটা সরকারি চাকরি খুব দরকার।”
আমার অমুক জবটা খুব দরকার!
.
আরে ভাই, বাংলাদেশে (এমন কি বিশ্বের যে কোনো দেশে) একটা সরকারি দরকার নাই কিংবা কোনো চাকরির দরকার এমন লোক আপনি খুঁজে পাবেন?
হয়তো পেতে পারেন; তবে সেটা লাখে কোটিতে একজন।
.
এমনকি আমি এমন অনেক লোক দেখেছি যারা ক্লাস ফাইভ পাশ করেনি কিংবা এসএসসি পাশ করেনি তারাও বলে, “আচ্ছা আমাকে কি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়া যাবে? একটা চাকরি হলে খুব ভালো হতো।” ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাহলে দেখা গেলে দেশে-কিংবা বিদেশে সবারই একটা চাকরি দরকার। আর সেটা যদি হয় সরকারি তাহলে তো কোনো কথাই নেই!
এখন কথা হলো এই যে একটা চাকরি পাওয়ার জন্য চাকরি চাকরি করছেন, আপনি তার জন্য কতটুকু সময় দিয়েছেন? তার জন্য কতটুকুই বা সাধনা করেছেন?

আপনি আপনার প্রেমিকা/প্রেমিকের মন রাখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে কথা বলে সময় নষ্ট করছেন। মোবাইলে রিচার্জ করে অনেক অর্থ অপচয় করেছেন। মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতে বলতে কান ও মোবাইল গরম হয়ে যায় তাও কথা বলা শেষ হয় না! চ্যাটিং করতে করতে মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যায়; অনেক সময় চার্জে লাগিয়ে চ্যাট করেন কিংবা কথা বলেন। ঘুমের কারণে চোখ মেলতে পারেন না, কিন্তু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বলতে বলতে, কিংবা চ্যাটিং করতে করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছেন সেটা ঘুম থেকে উঠার পরও বলতে পারেন না!
.
এই যদি আপনার অবস্থা, তাহলে আপনি কীভাবে একটা সরকারি চাকরি বা একজন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আশা করেন?
এক প্রেমিকা/প্রেমিকের মন রক্ষা করতে এতো সময় আর এতো অর্থ নষ্ট করছেন? এতো সাধনা করছেন? এখন আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, তার তুলনার একটা ভালো সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য কতটুকু সময় দিয়েছেন আর কতটুকু সাধনা করেছেন?
.
তাহলে আপনিই বলুন, আপনি কোনটা পাওয়ার জন্য বেশি সময় ব্যয় করছেন? সাময়িক প্রশান্তির জন্য প্রেমিকা/প্রেমিকের মন রক্ষা করার জন্য নাকি একটি ভালো সরকারি বা বেসরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য?
আপনি যদি আপনার একটা চাকরি পাওয়ার জন্যই তুলনামূলক অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় করেন, সাধনা করেন তাহলে সেটাই পাবেন। তবে আপনি যদি বিপরীতটা করেন ফাইনালি সেটা পাবেন কিনা তার কোনো গ্যারান্টি নেই। ৫০-৫০ চান্স। কারণ সে আপনার চেয়ে ভালো পজিশনে চলে গেলে ডিগবাজি দিবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই! বরং আপনি প্রেমিক/প্রেমিকার পিছনে ঘুরে অযথা সময় ও অর্থ ব্যয় না করে সেই সময়, অর্থ, মেধা, শ্রম পড়শোনার পিছনে ব্যয় করুন; একটা ভালো চাকরি পাওয়ার পিছনে ব্যয় করুন। দেখবেন, একটা ভালো চাকরি পেয়ে গেলে শুধু সেই প্রেমিক/প্রেমিকাই নয় তার অভিভাবকও আপনাকে পাওয়ার জন্য অধিক সময় ব্যয় করবে, আপনাকে পেতে সাধনা করবে!
আরেকটি কথা মনে রাখবেন, আপনি প্রথম পড়াশোনার পিছনে ঘুরুন, দেখবেন চাকরি আপনার পিছনে ঘুরছে দুদিন আগে বা পরে । আর চাকরি যখন আপনার পিছনে ঘুরবে তখন দেখবেন প্রেমিক/প্রেমিকা, তার অভিভাবক এমনকি সারা পৃথিবীই আপনার পিছনে ঘুরছে।
আচ্ছা আপনি কখনো দেখেছে এই পৃথিবী কোনো ব্যর্থ ও পরাজিতদের পূজা করতে? সারা পৃথিবীই কিন্তু সফল ও জয়ীদের পূজারী ব্যর্থ কিংবা পরাজিতদের নয়!
.
সবশেষে আমার প্রিয় ও অনুপ্রেণার একজন মানুষ এপিজে আবদুল কালামের একটি উক্তি মনে করিয়ে দিতে চাই, “Be more dedicated to make solid achievements than in running after swift but synthetic happiness.”
.
*সকল সৎ পরিশ্রমী ও আশাবাদীদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
__________________________________
©©© গাজী মিজানুর রহমান
***৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার,
****সাবেক সিনিয়র অফিসার
(পূবালী ব্যাংক লিমিটেড)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x
Scroll to Top